আজ, বৃহস্পতিবার


২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেসব কাজ আল্লাহর ঘর মসজিদে নিষিদ্ধ

শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
যেসব কাজ আল্লাহর ঘর মসজিদে নিষিদ্ধ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার:

মসজিদ আল্লাহর ঘর। এই ঘরের বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার আছে, রয়েছে কিছু বিধি-নিষেধ। যা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। মসজিদে নিষিদ্ধ কাজের কয়েকটি হলো-

হারানো জিনিসের ঘোষণা: কোনো কিছু হারিয়ে গেলে মসজিদে বা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া জায়েজ নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে যে মসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন বলে, তোমার হারানো জিনিস তুমি যেন না পাও আল্লাহ সেটিই করুন। কারণ হারানো জিনিস খোঁজার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩

ক্রয়-বিক্রয়: মসজিদ নির্মাণ করা হয় আল্লাহর ইবাদত করার জন্য, তার জিকির করার জন্য এবং আল্লাহর ইবাদতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি পালনের জন্য। মসজিদ পার্থিব কোনো কাজের জন্য বানানো হয়নি। যেমন ক্রয়-বিক্রয় করা, বাজার বসানো ইত্যাদি। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে, ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং জুমার নামাজের আগে বৃত্তাকারে বসতে নিষেধ করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ: ১০৭৯

অযথা গল্প-গুজব: হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অচিরেই এমন একসময় আসবে, যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াবি কথাবার্তা বলবে। অতএব, তোমরা এসব লোকের গল্প-গুজবে বসবে না। আল্লাহতায়ালার এমন লোকের প্রয়োজন নেই।’ -বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৯৬২

উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা: মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ। সায়িব ইবনু ইয়াজিদ (রা.) বলেন, একবার আমি মসজিদে দণ্ডায়মান ছিলাম, এমন সময় আমাকে একজন লোক কংকর মারল। আমি দেখি তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)। তিনি আমাকে বলেন, যাও, ওই দুই ব্যক্তিকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি তাদের নিয়ে এলাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন গোত্রের বা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা তায়েফের লোক। ওমর (রা.) বলেন, যদি তোমরা মদিনার লোক হতে তাহলে আমি তোমাদের নিশ্চয়ই কঠিন শাস্তি দিতাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মসজিদে তোমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ? -সহিহ বোখারি: ৪৭০

কারো ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো: মসজিদে পার্শ্ববর্তী মুসল্লির অসুবিধা করে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করা, এমনকি কোরআন তেলাওয়াত করাও নিষিদ্ধ। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ইতিকাফ করছিলেন। তিনি সাহাবিদের শুনতে পেলেন তারা উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করছে। তাদের তেলাওয়াত শুনে তিনি পর্দা খুলে বলেন, ‘মুসল্লি তার রবের সঙ্গে কানে কানে কথা বলে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ করে সে তার রবের সঙ্গে কী বলছে। আর তোমাদের কেউ যেন একে অপরের ওপরে উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত না করে।’ -সুনানে আবু দাউদ: ১৩৩২

দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ: মসজিদে মানুষ নামাজ আদায় করতে আসে। দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাতীয় কোনো কিছু খেয়ে মসজিদে যাওয়া দূষণীয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের সময় বলেন, ‘যে ব্যক্তি এসব গাছের কোনো একটি খায় অর্থাৎ রসুন বা অনুরূপ স্বাদ ও গন্ধের কোনো কিছু খায় সে যেন মসজিদে না আসে।’ -সহিহ মুসলিম: ১১৩৫

ইসলামি স্কলাররা বলেন, বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাতীয় সব বস্তু হারাম। আর তাতে আছে উত্কট দুর্গন্ধ, যা পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসল্লির জন্য অত্যাবশ্যক।

সহবাস: মসজিদে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীগমন করো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় থাকো।’ -সুরা বাকারা: ১৮৭

তবে মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা ও খোঁজখবর নেওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই। আর এই বিধান সব সময়ের জন্য।

নিজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারণ: হজরত আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন কাকের ঠোকরের মতো (তাড়াতাড়ি) সিজদা করতে, চতুষ্পদ জন্তুর মতো বাহু বিছাতে এবং উটের মতো মসজিদের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে নিতে।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৮৬২

আজানের পর মসজিদ থেকে বের হওয়া: কেউ মসজিদে অবস্থানকালে কোনো নামাজের জন্য আজান হয়ে গেলে প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া উচিত নয়। হজরত আবু শাসা (রা.) বলেন, আসরের নামাজের আজান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে গেল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করল। -জামে তিরমিজি: ২০৪

তবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য, টয়লেটে অথবা অন্যকোনো জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া জায়েজ আছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, (একবার) নামাজের ইকামত দেওয়া হয়ে গেল, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন তার ওপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বলেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অপেক্ষা করো। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন, অতঃপর ফিরে এলেন, তখন তার মাথা থেকে পানি টপ টপ করে পড়ছিল। অতঃপর সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। -সহিহ বোখারি: ৬৪০

কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে বসা: হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তোমার ভাইকে তার স্থান থেকে না ওঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে স্থানে না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা প্রশস্ত করো। -সহিহ মুসলিম: ৫৫৮১

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com